|
জিডি শব্দটি জেনারেল ডায়েরীর সংক্ষিপ্ত রুপ। প্রতিটি থানায় এবং ফাঁড়িতে একটি ডায়েরীতে ২৪ ঘন্টার খবর রেকর্ড করা হয়। সাধারণ ডায়েরি বা জেনারেল ডায়েরি (জিডি) অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। জিডি বা জেনারেল ডায়েরি হলো কোনো অপরাধ বা ক্ষতি সংঘটনের আশঙ্কাজনিত বিবরণ। বিভিন্ন রকমের সমস্যার কারণে আমাদের পুলিশের কাছে যেতে হয়। কিছু বিশেষ কারণে নিকটস্থ থানায় পুলিশের কাছে ঘটনার সাধারণ বিবরণ লিখিত আকারে পেশ করাকে সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা বলা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো ব্যক্তি থানায় এটি করতে পারবেন। সাধারণত ডায়েরি (জিডি) করার উদ্দেশ্য হলো সমস্যার বিষয়ে থানাকে অবগত করা যাতে ঘটনার গুরুত্ব অনুসারে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
|
যে সব কারণে জিডি করা হয় এবং জিডি করার উদ্দেশ্য:
- যদি কোন রকমের অনাকাঙ্খিত অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে পুলিশ আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারে যাতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে।
- কখনো কোনো ধরনের হুমকির মুখোমুখি হলে। অর্থাৎ কাউকে ভয় ভীতি দেখানো হলে বা অন্য কোন কারণে যদি কেউ নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। এক্ষেত্রে পুলিশ আগে থেকেই হুমকিপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে।
- কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র হারিয়ে গেলে। এক্ষেত্রে জিডি দলিল হারানোর প্রমাণ হিসাবে কাজ করবে। তাছাড়া কেউ দলিলটি খুঁজে পেয়ে থানায় ফেরত দিলে তা পুলিশের মাধ্যমে প্রকৃত মালিক ফেরত পেতে পারে।
সাধারণত যেসব বিষয়ে জিডি করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে ইভ টিজিং, বিভিন্ন রকমের হুমকি, সাক্ষী (যদি থাক, হারানো দলিল/সার্টিফিকেট/পাসপোর্ট, কোনো ব্যক্তি, নৈশপ্রহরী, দারোয়ান, গৃহপরিচারিকা, কেয়ারটেকার পালিয়ে গেলে বা নিঁখোজ হলে এবং ছেলে মেয়েকে বা মেয়ে ছেলেকে নিয়ে পালালে বা কাজের মানুষ পালালে, কোনো মূল্যবান বস্তু যেমন ক্যামেরা, ল্যাপটপ, কমপিউটার, ব্যগেজ, ব্যাগ ইত্যাদি হারয়ে গেলে বা চুরি হলে।
|
জিডি কেন গুরুত্বপূর্ণ:
কোনো অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে আইন সহায়তাকারী সংস্থার সাহায্য পাওয়ার জন্য এটি প্রথম পদক্ষেপ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। জিডি করতে দেরি হলে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ জোরালো হবে। অন্যদিকে জিডি সময়মতো করা হলে অভিযোগ শক্তিশালী হবে। জিডি করার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে তদন্ত করা, নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে পুলিশ মামলা করে থাকে। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতেও জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
|
কিভাবে জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করবেন:
জিডি করতে হয় দরখাস্ত আকারে। দরখাস্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাবর। নিচে থাকবে থানার নাম। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে (দলিলপত্র, মূল্যবান বস্তু হারিয়ে যাওয়া) বা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে সে এলাকার থানা বা পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করতে হয়। জিডি করার জন্য থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ঘটনাটি মৌখিক বা লিখিতভাবে জানাতে পারেন। জিডি করতে যে কোনো পরামর্শের জন্য সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাঁকে লিখে দিতে অনুরোধ করুন এবং এজন্য কোনো অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। জিডি করার জন্য থানায় কোনো টাকা দিতে হয় না বা এর জন্য কোনো ফি-ও ধার্য নেই। জেনারেল ডায়েরি একটি মূল্যবান রেজিস্ট্রার। প্রত্যেক থানা বা ফাঁড়িতে জেনারেল ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে সে এলাকার থানাতেই জিডি করতে হবে।
- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে লিখতে হবে এবং থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।
- বিষয় : ‘জিডি করার জন্য আবেদন’- এভাবে লিখতে হবে।
- অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করলে জিডিতে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
- হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- হুমকি প্রদানকারী পরিচিত হলে তার/তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।
- জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে।
- সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হবে।
উল্লেখ্য, জিডি দুই কপি করতে হবে। এক কপি নথিভুক্ত করার জন্য থানায় জমা দিতে হবে, আরেক কপি থানার কর্মকর্তার সিল এবং জিডির নম্বর সংবলিত কপিটি যত্ন করে সংরক্ষণ করতে হবে। জিডি করতে থানায় কোনো ফি দিতে হয় না।
যদি কোনো বিষয়ে এখনই কোনো মামলা না করতে চান, তাহলে জিডিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিতে হবে যে এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করবেন না। তবে মনে রাখবেন, পুলিশ যদি মনে করে যে কোনো মারাত্মক অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে। জিডি করতে যে কোনো পরামর্শের জন্য সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। থানায় জিডি করা হলে তা যদি কোনো অপরাধ আমলে নেয়ার জন্য হয়, তাহলে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবেন। আর যদি কোনো অপরাধ অধর্তব্য প্রকৃতির হয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৫(২) ধারা অনুসারে এখতিয়ারবান ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
|
জিডির একটি নমুনা কপি:
তারিখঃ ………………
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………………..থানা, ঢাকা।
বিষয় : সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির জন্য
আবেদন।
জনাব,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাম: …………………………………
বয়স : ………………………………………………………
পিতা/স্বামী : ………………………………………………..
ঠিকানা : …………………………………………………….
এই মর্মে জানাচ্ছি যে আজ/গত …………………….. তারিখ ……………. সময় …………….জায়গা থেকে আমার নিম্নবর্ণিত কাগজ/মালামাল হারিয়ে গেছে।
বর্ণনা : (যা যা হারিয়েছে)
বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার অনুরোধ করছি।
বিনীত
নাম:
ঠিকানা:
মোবাইল নম্বর:
|
জিডি ও মামলার মধ্যে পার্থক্য:
তবে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায় মামলা হয়, জিডি হয় না। কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটে গেলে তখন হয় মামলা। জিডি করা মানে কোনো মামলা করা নয়। আর কোনো ঘটনা বা অপরাধ এখনো সংঘটিত হয়নি কিন্তু ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বা কাউকে হুমকি দেয়ার কারণে শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রেই জিডি এন্ট্রি করা আবশ্যক হয়ে পড়ে; যাতে অপরাধ সংঘটনকারী সতর্ক হয়ে যায়।
কোনো অপরাধ বা অপরাধমূলক কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে থানায় প্রতিকার পাওয়ার জন্য যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। মূলত এজাহার করার মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়।
|
অনলাইনে জিডি করার নিয়ম:
যদি তাৎক্ষণিক পুলিশকে প্রয়োজন না হয় বা থানায় যেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে অনলাইনেও জিডি করা যায়। । প্রয়োজনে সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স ও ই-মেইলও করতে পারেন। দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। ইমেইল করার ঠিকানা: bangladesh@police.gov.com, ফ্যাক্স: 9558818 এবং অনলাইনে জিডি করতে ভিজিট করবেন www.police.gov.bd সাইটে। সেখানে ক্লিক করুন Citizen help request বিভাগে।
আবার পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেবার প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে যেমন পাসপোর্ট হারানো, বাখাটে বা মাদক সেবীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান বা এজাতীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করা যেতে পারেন বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স বা ই-মেইল করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করার পর ই-মেইল বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডি নম্বরটি জিডিকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ই-মেইল: bangladesh@police.gov.bd.
ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৯৫৫৮৮১৮
ওয়েবসাইট: http://www.police.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘Citizens help request’ –এ ক্লিক করতে হবে।
|