ধর্ম ছাড়া যে বিজ্ঞান সেটা হল পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া যে ধর্ম সেটা হল অন্ধ। -আইনস্টাইন
আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদনে আইনস্টাইনকে “শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি” হিসেবে অভিহিত করে।
১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির উলম শহরে এক ইহুদি পরিবারে আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেন। তাননর শৈশব কাটে মিউনিখে। মায়ের আগ্রহে মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি বেহালা বাজানো শিখেছিলেন। ছোটবেলায় আইনস্টাইন বেশ ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়ার পর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধ লেগে যাওয়ায় ধর্মের উপর বিশ্বাস কমতে থাকে। ম্যাক্স টালমুড নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক ছাত্র তাঁকে উচ্ছতর গণিত ও দর্শন বিষয়ে দীক্ষা দিত। আইনস্টাইন জুরিখের সউিজ ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলে পড়াশুনা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এই সময় বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব এড়ানোর জন্য জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পাঁচ বছর পর ১৯০১ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
১৯০৩ সালে স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করেন। এসময় প্রাক্তন এক সহপাঠির বাবর সুপারিশে একটি পেটেন্ট অফিসে চাকুরি পান এবং একই সাথে লেখাপড়াও চালিয়ে যান। ১৯০১ থেকে ১৯০৭ সালে চাকুরির পাশাপাশি জার্মান বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। চতুর্থ গবেষণা পত্রটি ছিল তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্ব E=mc2 যেটি বিজ্ঞানের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এইসময় জার্মানীর বার্লিন শহরে কাইজারের পৃষ্টপোষকতায় কাইজার তলহেলম ইনস্টিউট নামে একটি বড় আকারের বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপিত হয়। আইনস্টাইনকে সেখানে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে সাড়া দিয়ে ১৯১৪ সালে বার্লিনে ফিরে আসেন। আবার নতুন করে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। গবেষণায় মনোযোগী হতে হয়ে তিনি সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়লেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক আর ভালো রইল না। মিলেভা দুই পুত্রসন্তানকে নিয়ে সুইজারল্যান্ড চলে গেলেন। এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই পরোক্ষভাবে তাতে জড়িয়ে পড়লেন। যুদ্ধের বিভৎসতা, সংসারের একাকীত্ব এবং স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে আইনস্টাইন যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলেন পূর্ব পরিচিত ও দুঃসম্পর্কের বোন এলসা। মিলেভার সাথে বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা সেড়ে আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে নতুন জার্মান রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠা হল। অবশেষে ১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ইতিমধ্যে জার্মানীতে হিটলারের নেতৃত্বে একদল লোক জাতীয়তাবাদীর নেশায় মত্ত হয়ে ইহুদি বিতাড়ন শুরু করলে আইনস্টাইন জার্মানী ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই তিনি ইংল্যান্ড হয়ে আমেরিকায় রওনা হলেন। জারমানদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে অনেকটা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকতে হল। ১৯৩৬ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী এলসা অসুস্থ হয়ে চিরদিনের মত চলে গেলেন। এদিকে ইউরোপ আমেরিকা তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধের উন্মাদনায় মত্ত। যুদ্ধ জয়ের জন্য তৈরি হল পরমাণু বোমা যার মূল ত্ত্ত্ব আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রে। যদিও আইনস্টাইন সবসময় যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন।
১৯৫০ সালে তাঁর নতুন গবেষণা কর্ম ” A generalised theory of Gravitation” (মহাকর্ষের সর্বজনীন তত্ত্ব) প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠা নতুন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তাব আসলে তাতে তিনি রাজী হননি। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল ছিয়াত্তর বছর বয়সে আইনস্টাইনের জীবনাবসান হলে তাঁর ইচ্ছা অনিসারে মৃতদেহটা পুড়ে ছাই করে ফেলা হয়।
সূত্র: উইকিপিডিয়া