জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সদস্যদেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নত দেশ—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি সিডিপি সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। বিশ্বব্যাংক সদস্যদেশগুলোকে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ—এই চার ভাগে ভাগ করেছে। ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশ।
পূর্বকথা
উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সূচক তৈরি করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। তারই ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ (Least Developed Countries), উন্নয়নশীল দেশ (Developing Countries) ও উন্নত দেশ (Developed Countries) তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিডিপি। এলডিসি ধারণাটি প্রথম আলোচনা হয় ১৯৬০ সালে। তবে প্রথম এলডিসির তালিকা করা হয় ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর। এতে তখনকার মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ২৫টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বিভিন্ন দেশের বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই তালিকাকে আপডেট করা হয়। আর বাংলাদেশ এলডিসিতে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৭১ থেকে ২০১৮ এই ৪৭ বছরে এই অসম্মানজনক তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছে মাত্র পাঁচটি দেশ। এগুলো হলো বোতসোয়ানা, কেপ ভার্দে, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, মালদ্বীপ ও সামোয়া। উন্নয়নশীল (developing) দেশ বোঝাতে কম উন্নত (less developed) বা অনুন্নত (underdeveloped) দেশ শব্দও ব্যবহার করা হয়। ৪৮টি দেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় আছে। জাতিসংঘের কমিটি বলেছে, আগামী তিন বছরে আরও দুটি দেশ ভানুয়াতু (২০২০) এবং অ্যাঙ্গোলা (২০২১) এই উত্তরণের তালিকায় আছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে ৪৭টি দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে ৩৩টি আফ্রিকায়। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে আছে ১৩টি, লাতিন আমেরিকায় একটি (হাইতি)।
গত ১৫ মার্চ জাতিসংঘের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ, লাওস এবং মিয়ানমার প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের শর্ত পূরণ করেছে। তবে আরও তিন বছর দ্বিতীয় দফায় শর্ত পূরণ করতে পারলে চূড়ান্তভাবে এলডিসি তালিকা থেকে এ দেশগুলো বের হতে পারবে।
পদ্ধতি
বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘ আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। যেমন, বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের সুবিধার জন্য সদস্যদেশগুলোকে মাথাপিছু আয়ের ওপর ভিত্তি করে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ—এই চার ভাগে ভাগ করেছে। তবে এই ভাগটি শুধু আয়ভিত্তিক বলে এখানে কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্রটি বোঝা যায় না। কেননা, উচ্চ মাথাপিছু আয় থাকার পরও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অনেক দেশ সামাজিক সূচকে পিছিয়ে থাকে। যেমন যুদ্ধবিদ্ধস্থ তেল রপ্তানীকারী কিছু দেশ সামাজিক ও মান উন্নয়ণ সূচকে পিছিয়ে থাকলেও শুধুমাত্র মাথাপিছু আয় থাকার কারণে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে পরিগণিত হয়। তাই জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকের ভিত্তিতে বিশ্বের দেশগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে: স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক কমিটি বা কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) তিনটি সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পর পর এলডিসির তালিকা তৈরি করে থাকে।
এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে যে তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয় সেগুলো হচ্ছে: (ক) মাথাপিছু আয়: তিন বছরের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই); (খ) মানবসম্পদ সূচক, এটি পুষ্টি, স্বাস্থ্য, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি হয়; (গ) অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক, যেটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৬ বা তার বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ৩২ বা তার কম হলে সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির যোগ্য বিবেচনা করা হয়। এসব সূচকে আগের তিন বছরের গড় পয়েন্ট হিসাব করা হয়। একটি দেশ যেকোনো দুটি সূচক অর্জন করতে পারলে, সেটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটানোর যোগ্যতা অর্জন করে। তবে ইচ্ছে করলে কোনো দেশ শুধু আয়ের ভিত্তিতেও এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার মাথাপিছু আয় মূল্যায়নের বছরে নির্ধারিত প্রয়োজনীয় আয়ের দ্বিগুণ হতে হবে। যেমন সার্কভুক্ত দেশ ভুটান মাথাপিছু আয় ২,৫১০ ডলার সত্ত্বেও একটি এলডিসি। তাই মধ্যম আয়ের দেশ হলেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটে না।
জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির ২০১৮ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে পরের তিন বছর সূচকগুলোতে একই অবস্থা বজায় রাখতে হবে। এরপর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসোক)। আরও তিন বছর পর ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেওয়া হবে।
LDC Profile Bangladesh 2018 – www.un.org
মূল্যায়ন
ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সিডিপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের একাধিক আলোচনা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের একাধিক প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচকের সর্বশেষ অবস্থান অবহিত করে এসেছে। এরপর গত অক্টোবর মাসে জাতিসংঘের সিডিপির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। শর্ত অনুযায়ী একটি দেশকে উন্নয়নশীল হতে হলে বর্তমানে প্রথমত, মাথাপিছু আয় ১,২৩০ মার্কিন ডলার হতে হয়, ২০১৭ – ২০১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১,২৭৪ মার্কিন ডলার। দ্বিতীয়ত, মানব সম্পদের উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের ৬৬ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ৭৩ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে। আর তৃতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর না হওয়ার মাত্রা ৩২ পয়েন্ট বা তার নিচে থাকতে হবে। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে তা ২৫ ভাগ অর্জন করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যে শর্ত দরকার, তা পূরণ করায় আবেদন করার যোগ্য হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল। আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বাংলাদশের প্রোফাইলে এখন বলা আছে, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা এই মার্চেই অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
উপরল্লোখিত স্বল্পোন্নত ও নিম্নলিখিত উন্নত দেশগুলো ছাড়া বাকী দেশগুলো জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
মাথাপিছু আয় GNI
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উভয়ের তালিকায় কোনো দেশের স্থান নির্ধারনে মাথাপিছু আয় – GNI (Gross national income) per capita গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের GNI-এর পরিসংখ্যান দেখানো হলো। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় শুরু থেকেই ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার নাম ছিল না। এদেশগুলো শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে এদেশগুলোর তুলনামূলক মাথাপিছু আয় চার্টের মাধ্যমে দেখানো হলো।
বিশ্বব্যাংকের তালিকা
বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের সুবিধার জন্য সদস্যদেশগুলোকে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ—এই চার ভাগে ভাগ করেছে। প্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় অনুসারে দেশগুলোকে চারটি আয় গ্রুপে ভাগ করে। প্রতিবছর এই তালিকা নতুন করে তৈরি করা হয়। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অ্যাটলাস পদ্ধতিতে যাদের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১,০০৫ ডলার বা তার নিচে, তাদের বলা হয় নিম্ন আয়ের দেশ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে মাথাপিছু আয় ১,০০৬ থেকে ৩,৯৫৫ ডলার হতে হবে। আর উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে ৩,৯৫৬ থেকে ১২,২৩৫ ডলার। উচ্চআয়ের দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে ১২,২৩৬ ডলারের উপরে।
World Bank Country and Lending Groups
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশ। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ও ভুটান নিম্নমধ্যম আয় ও মালদ্বীপ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় রয়েছে।
LOW-INCOME – ECONOMIES ($1,005 OR LESS)
(31 countries)
Afghanistan | Guinea | Rwanda |
Benin | Guinea-Bissau | Senegal |
Burkina Faso |
Haiti | Sierra Leone |
Burundi | Korea, Dem. People’s Rep. | Somalia |
Central African Republic |
Liberia | South Sudan |
Chad | Madagascar | Tanzania |
Comoros | Malawi | Togo |
Congo, Dem. Rep |
Mali | Uganda |
Eritrea | Mozambique | Zimbabwe |
Ethiopia | Nepal | |
Gambia, The |
Niger |
LOWER-MIDDLE-INCOME – ECONOMIES ($1,006 TO $3,955)
(53 Countries)
Angola | Indonesia | Philippines |
Armenia | Jordan | São Tomé and Principe |
Bangladesh | Kenya | Solomon Islands |
Bhutan | Kiribati | Sri Lanka |
Bolivia | Kosovo | Sudan |
Cabo Verde | Kyrgyz Republic | Swaziland |
Cambodia | Lao PDR | Syrian Arab Republic |
Cameroon | Lesotho | Tajikistan |
Congo, Rep. | Mauritania | Timor-Leste |
Côte d’Ivoire | Micronesia, Fed. Sts. | Tunisia |
Djibouti | Moldova | Ukraine |
Egypt, Arab Rep. | Mongolia | Uzbekistan |
El Salvador | Morocco | Vanuatu |
Georgia | Myanmar | Vietnam |
Ghana | Nicaragua | West Bank and Gaza |
Guatemala | Nigeria | Yemen, Rep. |
Honduras | Pakistan | Zambia |
India | Papua New Guinea |
UPPER-MIDDLE-INCOME – ECONOMIES ($3,956 TO $12,235)
(56 Countries)
Albania | Ecuador | Nauru |
Algeria | Fiji | Panama |
American Samoa | Gabon | Paraguay |
Argentina | Grenada | Peru |
Azerbaijan | Guyana | Romania |
Belarus | Iran, Islamic Rep. | Russian Federation |
Belize | Iraq | Samoa |
Bosnia and Herzegovina | Jamaica | Serbia |
Botswana | Kazakhstan | South Africa |
Brazil | Lebanon | St. Lucia |
Bulgaria | Libya | St. Vincent and the Grenadines |
China | Macedonia, FYR | Suriname |
Colombia | Malaysia | Thailand |
Costa Rica | Maldives | Tonga |
Croatia | Marshall Islands | Turkey |
Cuba | Mauritius | Turkmenistan |
Dominica | Mexico | Tuvalu |
Dominican Republic | Montenegro | Venezuela, RB |
Equatorial Guinea | Namibia |
HIGH-INCOME – ECONOMIES ($12,236 OR MORE)
(78 Countries)
Andorra | Greece | Poland |
Antigua and Barbuda | Greenland | Portugal |
Aruba | Guam | Puerto Rico |
Australia | Hong Kong SAR, China | Qatar |
Austria | Hungary | San Marino |
Bahamas, The | Iceland | Saudi Arabia |
Bahrain | Ireland | Seychelles |
Barbados | Isle of Man | Singapore |
Belgium | Israel | Sint Maarten (Dutch part) |
Bermuda | Italy | Slovak Republic |
British Virgin Islands | Japan | Slovenia |
Brunei Darussalam | Korea, Rep. | Spain |
Canada | Kuwait | St. Kitts and Nevis |
Cayman Islands | Latvia | St. Martin (French part) |
Channel Islands | Liechtenstein | Sweden |
Chile | Lithuania | Switzerland |
Curaçao | Luxembourg | Taiwan, China |
Cyprus | Macao SAR, China | Trinidad and Tobago |
Czech Republic | Malta | Turks and Caicos Islands |
Denmark | Monaco | United Arab Emirates |
Estonia | Netherlands | United Kingdom |
Faroe Islands | New Caledonia | United States |
Finland | New Zealand | Uruguay |
France | Northern Mariana Islands | Virgin Islands (U.S.) |
French Polynesia | Norway | |
Germany | Oman | |
Gibraltar | Palau |
মধ্যম আয়ের ফাঁদ: আয় বাড়লেই তাকে এখন আর উন্নয়ন বলা হয় না। ফলে কেবল আয় বাড়িয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’-এ পড়ে আছে অসংখ্য দেশ। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো আটকে আছে বহুদিন ধরে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি চীন ও রাশিয়াও আটকে আছে মধ্যম আয়ের ফাঁদে। মূলত যারা কেবল আয় বাড়াতেই মনোযোগ দিয়েছে বেশি, অবকাঠামো, শিক্ষাসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন, রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামুখী থাকার দিকে নজর দেয়নি, তারাই আটকে আছে এই ফাঁদে।
এক নজরে সার্কভুক্ত দেশের অবস্থান
জাতিসংঘ | বিশ্বব্যাংক | ||||
দেশ | স্বল্পোন্নত | উন্নয়নশীল | নিম্ন আয় | নিম্নমধ্যম আয় | উচ্চমধ্যম আয় |
মালদ্বীপ | X | X | |||
শ্রীলংকা | X | X | |||
ভারত | X | X | |||
পাকিস্তান | X | X | |||
বাংলাদেশ | X | X | |||
ভুটান | X | X | |||
নেপাল | X | X | |||
আফগানিস্তান | X | X |
এলডিসি বনাম মধ্যম আয়ের দেশ
মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া একটি মর্যাদা। বিশ্বব্যাংক সাহায্য দেওয়ার সুবিধার জন্য এই শ্রেণীকরণটি করেছে। সুতরাং এর সঙ্গে জড়িত মূলত সাহায্য। এলডিসি জাতিসংঘের তালিকায় আছে। এর ফলে এই দেশগুলো উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাজার-সুবিধা পেয়ে থাকে। সুতরাং এর সঙ্গে জড়িত বাজার-সুবিধা।
উন্নয়নশীল/মধ্য আয়ের দেশের তকমায় লাভ কী হবে বাংলাদেশের!
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরী হবে তেমনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রপ্তানী আয়, বৈদেশিক ঋণ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা সব দেশেরই থাকে। কেননা, এর সঙ্গে দেশের সম্মান, আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ও স্বীকৃতি ইত্যাদি জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ একটি অগ্রসরমাণ দেশ। মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার তুলনীয় অনেক দেশের চেয়ে বেশি। আর সামাজিক খাতে বাংলাদেশের সাফল্য তো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ! এটি আমাদের জন্য সুখকর নয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আমরা এক কাতারে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং সুশাসনের ঘাটতির জন্য আমরা দ্রুত অগ্রসর হতে পারছি না। মনে রাখতে হবে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বেশ কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি উন্নত দেশে আমরা আমাদের রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাই। উন্নয়নশীল দেশ হলে আমরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। তখন আমাদের প্রতিযোগী দেশ যেমন চীন ও ভিয়েতনামের মতো শর্তে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এ ছাড়া বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব আইন বা ট্রিপস এবং বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধাগুলো আমরা আর পাব না।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু এই সুবিধা পাওয়ার জন্যই আমরা স্বল্পোন্নত দেশে রয়ে যাব কি না! আর শুল্কমুক্ত সুবিধা সারা জীবন শুধু স্বল্পোন্নত দেশের জন্যও থাকবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা রাউন্ডের চুক্তিগুলো বাস্তবায়িত হলে শুল্ক এমনিতেই সবার জন্য কমে যাবে। তখন আর আমাদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক শুল্কসুবিধা থাকবে না। তা ছাড়া, বর্তমানে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিগুলোতেও শুল্ক হারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার সুবিধা একসময় শেষ হয়ে যাবে। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করে, মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটিয়ে এবং অর্থনৈতিক নাজুকতা কাটিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া এবং এবং ভবিষ্যতে উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়া।
তথ্যসূত্র: জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইন্টারনেট, পত্র-পত্রিকা