(খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ – খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দ)
রোমান সেনাপতি ও রাষ্ট্রনায়ক
“I came, I saw, I conquered.”
—Julius Caesar
আততায়ী/হত্যাকারী: গেইয়াস ক্যাসিয়াস লঙ্গিনাস এবং মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাসের নেতৃত্বে ৬০ জন রোমান সিনেটর।
ঘটনার স্থান ও কাল: রোম, ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৫ মার্চ
হত্যার অভিপ্রায়: একের পর এক যুদ্ধে জয়লাভ করে সিজার রোমের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে সাম্রাজ্য রক্ষার্থে যখন একনায়কতন্ত্রের পরিকল্পনা করেন তখন সিনেটের একটি পক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এই দলটি ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসের নেতৃত্বে গোপনে জুলিয়াস সিজারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পলাতক জীবন থেকে রোমে ফিরে আইন ও রাজনীতি বিষয়ে লেখাপড়া করে জুলিয়াস সিজার রাজনৈতিক কৌশল খাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সুল্লার মতবাদের প্রবক্তা হিসেবে কাজ করতে থাকেন। শক্ত হাতে জলদস্যু ও বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন এবং রাজ্যবিস্তারে সফল অভিযানের কারণে সিজার একজন দক্ষ সমরনায়ক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৬৮ অব্দে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন জুলিয়াস সিজার। সে বছর সিনেটের সদস্যপদ লাভের পাঁচ বছর পর লাভ করেন রোম সিনেটের ধর্মাধ্যক্ষের পদ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০ অব্দে সিজার, ক্র্যাসান ও পম্পেই যৌথভাবে এক রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সচেষ্ট হন। রোমান সিনেটের কনজারভেটিভ এলিটদের বিরোধিতায় তা সফল হয়নি। এই ষড়যন্ত্রের সাথে সিজারের কিছু যোগ থাকলেও তিনি রক্ষা পান। এরপর সিজার স্পেনের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। সে সময় তিনি triumph উপাধি লাভ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯ অব্দে কনসুল পদে এবং ৫৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তিনি গল প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি গলদের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে গল প্রদেশ অধিকারে আনার চেষ্টা করেন। রোমান সেনাবাহিনী গলদের পবিত্রস্থানের (যেখানে দেবতাকে নিবেদন করার উদ্দেশ্যে আনীত স্বর্ণ সঞ্চয় করে রাখা হতো) অর্থভাণ্ডার লুট করে। সিজার ঐ লুটের মাল দিয়ে সেনাদের বেতন বাড়িয়ে দেন এবং একই সঙ্গে তিনি তাদেরকে ভূ-সম্পত্তি বণ্টন করার প্রতিশ্রুতিও দান করেন। এভাবে সিজারের একটি সম্পূর্ণ আজ্ঞানুবর্তী এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হন। খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ অব্দে জুলিয়াস সিজার গাউল (বর্তমান ফ্রান্স) বিজয় সম্পূর্ণ করে রোমান ভূখণ্ডকে ইংলিশ চ্যানেল ও রাইন নদী পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেন। সিজার হন প্রথম রোমান সেনাপতি, যিনি ইংলিশ চ্যানেল ও রাইন অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তিনি রাইনের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে ব্রিটেনে অনুপ্রবেশ করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ অব্দে রোমের সিনেটর পম্পেই (Pompey) সিজারকে রোমে ফিরে আসতে বলেন। কারণ ইতিমধ্যে সিজারের শাসন করার সময় সীমা অতিক্রম হয়েছিলো। কিন্তু সিজার ভেবেছিলেন, এটি ছিলো রোমকে অধিকারে রাখার জন্য পম্পেই-এর কৌশল। তাই তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯ অব্দে, এক লেজিয়ন (তিন থেকে ছয় হাজার) সৈন্য নিয়ে রোম আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সিনেটের সৈন্যবল সিজারের চেয়ে বেশি থাকলেও, তা বিভিন্ন প্রদেশে ছড়ানো ছিলো। সিনেট তখন পম্পেই-এর উপর ভার দিলেন সিজারকে প্রতিরোধ করার। কিন্তু সিজার এত দ্রুত রোম আক্রমণ করেছিলেন যে, পম্পেই প্রতিরক্ষার কোনো আয়োজন করারই সুযোগ পাননি। প্রায় প্রতিরোধহীন অবস্থায় সিজার রোম ও সমগ্র ইতালি দখল করে নেন। এ আক্রমণ থেকে পম্পেই কোনোক্রমে নিজেকে রক্ষা করে স্পেন পালিয়ে যান। ইতোমধ্যে পম্পেই বলকান উপদ্বীপে বিরাট এক বাহিনী গঠন করেন। সিজারের বাহিনী পম্পেই-এর বাহিনীকে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে অভিযান চালায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে দুই বাহিনী পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখী হয়। এশিয়া মাইনরে ফারসালাসের যুদ্ধে পম্পেই নিহত হলে, সিজার রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হন। এ বিজয়ের পর সিজার মাত্র তিনটি শব্দে তার বিজয় সংবাদ রোমে পাঠিয়েছিলেন- Veni, vidi, vici (এলাম, দেখলাম, জয় করলাম)।
এরপর তিনি সরকারসংশ্লিষ্ট সংস্কার শুরু করেন, সূচনা করেন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। এক সময় সিজার নিজেকে ‘dictator in perpetuity'(‘চিরস্থায়ী স্বৈরশাসক’) ঘোষণা করেন। সিজার হয়ে ওঠেন রোমের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। এর ফলে শুরু হয় সিনেটরদের সাথে সিজারের ক্ষমতার দ্বন্ধ।
হত্যার পটভূমি: সব যুদ্ধে জয়লাভ করে সিজার তখন মাস্টার অব রোম. পম্পেইকে পরাজিত করে রোমের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। ফলে দেশটিতে গণতন্ত্রের অবসান হয়। রোম সাম্রাজ্য রক্ষার্থে সিজার তখন একনায়কতন্ত্রের পরিকল্পনা করছিলেন। সিজার রাজা উপাধি ধারণ করতে পারেন – এতে রোম প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটবে এবং সিনেটররা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বে, এ ধারণা থেকে সিজার ও সিনেটরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্বের পথ বেয়েই তাকে প্রাচীন রোমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দের ১৫ মার্চ বিশ্বাসভাজন ব্রুটাসের নেতৃত্বে স্বঘোষিত ‘লিভারেটর’ তথা সিনেটরদের একাংশের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে খুন হতে হয়।
হত্যাকাণ্ড: ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে নিন্দিত বিশ্বাসঘাতকের নাম মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস (Marcus Junius Brutus)। শুরুতে ব্রুটাস একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে রোমে প্রত্যাবর্তন করে বিয়ে করেন। এরপর রোমের সরকার ব্যবস্থায় জুলিয়াস সিজারের পক্ষে সিনেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ অব্দে রোমে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ব্রুটাস জুলিয়াস সিজারের পক্ষ ত্যাগ করে সিজারের শত্রু পম্পের পক্ষে অস্ত্র ধারণ।করেন। পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে জুলিয়াস সিজার জয়ী হলে ব্রুটাস তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে সিজারের কাছে পত্র লেখেন। উদার সিজার তাকে ক্ষমা করে একান্ত আস্থাভাজনদের কাতারে ঠাঁই দিয়ে একটি শহরের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। পরপর কয়েকটি যুদ্ধে জয়ের পর জুলিয়াস সিজারের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এতে হিংসাপরায়ণ হয়ে সিনেটররা জুলিয়াস সিজারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ব্রুটাস তার প্রতি সিজারের ক্ষমা প্রদর্শন এবং অনুগ্রহের কথা ভুলে সিনেটরদের পক্ষে যোগ দেন। ষড়যন্ত্রকারীরা একে অন্যের বাড়িতে মিলিত হয়ে সিজারকে হত্যার নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতেন। আলোচনা হতো কোথায় কখন, কিভাবে তাকে হত্যার কাজটি সম্পন্ন করা যায়। কারো পরামর্শ ছিল সেতু থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা সেতুর ওপরই তাকে হত্যা করা। কেউ চেয়েছিলেন তাকে গ্ল্যাডিয়েটর শোর দিনে হত্যা করা। এর একটা সুবিধা ছিল গ্ল্যাডিয়েটর শোতে অস্ত্র দেখতে পেলেও কেউ সন্দেহ করবে না। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বেশির ভাগের অভিমত ছিল তাকে সিনেটে হত্যা করা। কারণ সিনেট অধিবেশনের দিনে শুধু সিনেটরদএরকেই ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। সেদিন সিনেটরেরা তাদের ড্যাগার আলখেল্লার ভেতরে লুকিয়ে ঢুকে পড়তে পারবেন সহজেই। এ পরিকল্পনাই চূড়ান্ত হয়েছিলো।
যেদিন সিনেটে তিনি খুন হন, সেদিন সিজারকে তার চিকিৎসক, বন্ধুরা, তার স্ত্রী ক্যালপুর্নিয়া নানা কারণে সিনেটে যেতে মানা করেন। চিকিৎসক বললেন, তার শরীরটা ভালো নয়। স্ত্রী ক্যালপুর্নিয়া রাতে যে স্বপ্ন দেখেন, তা তার কাছে ভালো ঠেকছে না। তাই তিনি ১৫ মার্চের সিনেট অধিবেশনে না যাওয়ার জন্য সিজারের ওপর জোরাজুরি করছেন। কিন্তু সিজারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম একজন ব্রুটাস তখন সিজারকে বললেন, ‘একি সিজার, একজন মহিলা কী স্বপ্ন দেখল না দেখল, আর সে জন্য আপনি সিনেটে যাবেন না। আপনি না একজন বীর সেনানায়ক! এসব বাদ দিন। চলুন সিনেটে। সিনেটে সবাই আপনার অপেক্ষায়, সেই সকাল থেকে।’ ব্রুটাসের কথামতো সিজার চলে গেলেন সিনেটে।
জুলিয়াস সিজার যখন সিনেটে প্রবেশ করেন, তাকে দেখে সিনেটররা সম্মান জানানোর জন্য উঠে দাঁড়ান। যারা এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা দাঁড়িয়েছিলেন সিজারের কাছাকাছি। তার ঠিক ডান পাশে দাঁড়ান সিনেটর টিলিয়াস কিম্বার। এ সময় হঠাৎ করে কিম্বার সিজারের ঘাড় ধরে ফেলেন এবং সিজারের জ্যাকেট টেনে খুলে ফেলেন। সিজার তখন চিৎকার করে কিম্বারের উদ্দেশে বলেন, ‘কেন এই সন্ত্রাস?’ সে সময় অন্য সিনেটররা তাদের ড্যাগার বের করে সিজারের ওপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়েন। সবাই মিলে যেন এক সিজারের বিরুদ্ধেই মল্লযুদ্ধ করছিল। এক সময় আঘাতের পর আঘাত পেয়ে তিনি পরে গেলেন পম্পেইয়ের মূর্তির পায়ের নিচে। ষড়যন্ত্রকারীদের সবাই যেন চেয়েছিলেন এই খুনে অংশ নিতে। ফলে ষড়যন্ত্রকারীদের এমন কেউ বাকি ছিলেন না, যারা তাকে আঘাত করেননি। অসম প্রতিপক্ষকে তবুও মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন জুলিয়াস সিজার। এমনি এক মুহূর্তে সিজার দেখতে পেলেন তারই অনুগ্রহে বেঁচে যাওয়া ব্রুটাসও তাকে আঘাত করছে। আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি। রোমের ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় লম্বা পোশাক ‘টোগা’র আড়ালে মুখ লুকিয়ে নিজেকে সঁপে দিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে শুধু একটি কথাই বললেন, ‘ও তুমিও ব্রুটাস’! ছুরির ৩৫টি আঘাতের পর সিজার মারা যান।
ব্রুটাস ও তার সাথীরা এরপর মিছিল করে নগরবাসীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন : ‘রোমের প্রিয় জনতা, আমরা আবার স্বাধীন!’ সিজারের খুনের কথা শুনে নগরীর লোকজন নিজেদের ঘরে চলে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের পর কী ঘটে না ঘটে তা নিয়ে নগরবাসী ছিল শঙ্কিত। ঘটনাস্থলে সিজারের মৃতদেহ পড়েছিল প্রায় ৩ ঘণ্টা। এরপর অন্য কর্মকর্তারা এসে তার লাশ সরিয়ে নেয়।
হত্যাকাণ্ডের পর: এই হত্যাকাণ্ডের পর কী ঘটবে সে উপলব্ধি ছিল না হত্যাকারীদের মধ্যে। রোমান মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে সিজার খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সিনেটরদের একটি অভিজাত গোষ্ঠী সিজারকে হত্যা করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সিজারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য তৈরি মঞ্চ, লাশ পোড়ানোর জন্য সংগৃহীত কাঠ বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে। ফলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জনতা ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসের বাড়িতেও হামলা চালায়। সিজারের মৃত্যুর পর তিন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন মার্ক এন্টনী, সিজার অক্টাভিয়ান এবং লেপিডাস। সিজারের মৃত্যুতে জেনারেল এন্টনির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। সিজারের ঘনিষ্টতম বন্ধু ও কনসুল মার্ক এন্টনি সিনেটে সিজারের হত্যাকারীদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণার প্রস্তাব আনলে তা সিনেটরদের সর্বসন্মতিক্রমে পাশ হয়। মার্ক এন্টনি সিজারের হত্যাকারীদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করলেও জনতার রোষ থেকে বাঁচার জন্য ব্রুটাস ও ষড়যন্ত্রকারীদের অনেকেই রোম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে সময় ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসের প্রচুর সৈন্য ছিল গ্রিসে। তারা সেখানে গিয়ে অবস্থান করে। এন্টনি সিজারের মৃত্যুতে নিরপেক্ষ থেকে রোমান জনগণের অসন্তোষকে ব্যবহার করে রোমে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। সিজার তার ভাইপোর ছেলে গেইয়াস অক্টাভিয়ানকে একমাত্র উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। উইলের মাধ্যমে সিজার তাকে সবকিছু দিয়ে রোমান প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে সম্পদশালী নাগরিক করে তুলেছিলেন।
রোম সাম্রাজ্য (44 BC – 43 AC)
ইতোমধ্যে ক্ষমতা ও বিভিন্ন মতভেদের কারণে মার্ক এন্টনি ও অক্টাভিয়ান নিজেদের অনুগত সৈন্য নিয়ে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মুটিনার যুদ্ধে (21 April 43 BCE, Northern Italy) জড়িয়ে পড়ে। সিজারের হত্যাকারীদের অনেকেও তখন নিজস্ব সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মার্ক এন্টনির পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এন্টনির বাহিনী পরাজিত হলেও উভয় পক্ষে অনেকেই হতাহত হয়। পরিশেষে মার্ক এন্টনী, সিজার অক্টাভিয়ান এবং লেপিডাস সামনাসামনি বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে সন্মত হলেন যে এই কমিশন (Second Triumvirate) অর্থাৎ এই তিনজনের সন্মিলিত সিদ্ধান্তেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩ অব্দে অক্টাভিয়ান কনসুল নির্বাচিত হওয়ার পর সিজারের হত্যাকারীদের “রাষ্ট্রীয় শত্রু” ঘোষণা করে তাদেরকে হত্যা করার ফরমান জারী করেন।
ইতোমধ্যে অক্টাভিয়ান ও এন্টনির বিভাদ ও সৈন্যসামন্তসহ রোমের বাহিরে অবস্থানের খবর পেয়ে সিজারের অন্যতম দুই হত্যাকারী ব্রুটাস ও ক্যাসিয়্যাস নিজেদের অনুগত সৈন্য-সামন্ত নিয়ে গ্রীস থেকে রোম অভিযানের উদ্দ্যশ্যে যাত্রা শুরু করেন। খবর পেয়ে অক্টাভিয়ান ও এন্টনি পারষ্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজস্ব বাহিনী নিয়ে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়্যাসকে শায়েস্তা করতে মেসেডোনিয়ার ফিলিপ্পীতে এসে পৌঁছলেন। ফিলিপ্পীর যুদ্ধে (October 3 and 23, 42 BC) পরাজিত হয়ে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস আত্মহত্যা করে।
এন্টনি খ্রিষ্টপূর্ব ৪০ অব্দে অক্টাভিয়ানের বোন অক্টাভিয়াকে বিয়ে করেন, এটি ছিল তার ৩য় বিয়ে। এন্টনির দায়িত্বে ছিল রোম সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল, যার পরোক্ষ অধীনে ছিল ক্লিওপেট্রা শাসিত মিশর সাম্রাজ্য। ক্ষমতার জন্য এন্টনির প্রয়োজন ছিল সৈন্য ও নগদ অর্থ। তাই মার্ক এন্টনি মিত্রতা গড়ে তোলেন মিসরের রূপকথাতুল্য সম্পদের অধিকারী ক্লিওপেট্রার সাথে, যিনি ছিলেন সিজারের প্রেমিকা। স্ত্রী অক্টাভিয়ার পাশাপাশি ক্লিওপেট্রার সাথেও প্রণয়ের সম্পর্কের কারণে এন্টনির সাথে অক্টাভিয়ানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রথমে কমিশন (Second Triumvirate) থেকে লেপিডাসকে বহিষ্কার এবং পরে এন্টনী ও অক্টাভিয়ানের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে পুনরায় গৃহযুদ্ধের শুরু হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে অক্টাভিয়ানের নির্দেশে সিনেট এন্টনীকে “বিশ্বাসঘাতক” ঘোষণা দিয়ে ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ (Battle of Actium) ঘোষণা করে। যুদ্ধে অক্টাভিয়ানের কাছে এন্টনি ও ক্লিওপেট্রা পরাজিত হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রায় পালিয়ে যায় এবং সেখানে একইসাথে আত্মহত্যা করে। এই যুদ্ধে জয়ের পর সিজার অক্টাভিয়ান সব বাধাবিপত্তির অবসান ঘটিয়ে Caesar Divi Filius Augustus নাম ধারন করে রোম সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় আরোহন করেন।
“Cowards die many times before their deaths;
The valiant never taste of death but once.
Of all the wonders that I yet have heard,
It seems to me most strange that men should fear;
Seeing that death, a necessary end,
Will come when it will come.”
― William Shakespeare, Julius Caesar
____________________
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, পত্র-পত্রিকা,
Famous Assassinations in World History – Michael Newton