প্রাকৃতিকভাবে অথবা মানুষের কর্মকান্ডের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থের দ্বারা বায়ুদূষণের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা ঘটে। এসিড বৃষ্টি হল বৃষ্টি বা শিশির যা বিশেষত অম্লধর্মী, অর্থাৎ এটি উঁচু মাত্রায় হাইড্রোজেন আয়ন (নিম্ন মাত্রার pH-) ধারণ করে। এটি মানবজাতি, উদ্ভিদরাজি, পশুপাখি এবং জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থা এবং অবকাঠামোর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বৃষ্টির পানিতে মিশে বৃষ্টির পানিকে অ্যাসিডযুক্ত করে।
এসিড বৃষ্টির বেশ কিছু প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে। নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলো বজ্রাঘাতে উৎপাদিত হতে পারে এবং সালফার ডাই-অক্সাইড আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দ্বারা উৎপাদিত হয়।
কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ইত্যাদির দহনের ফলে সৃষ্ট সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2) এবং নাইট্রোজেনের (N) বিভিন্ন অক্সাইড বাতাসের জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সাথে মিলে সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ সৃষ্টি করে। এই অ্যাসিডীয় দূষণকারী পদার্থগুলি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌঁছে বাতাসের মাধ্যমে শত শত মাইল দূরে চলে যায়। পরিশেষে এগুলি বৃষ্টি, তুষার বা কুয়াশার আকারে, এমনকি অদৃশ্য অবস্থায় শুষ্ক আকারেও মাটিতে নেমে আসে।
তাপশক্তি ও বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম-জ্বালানির দহন নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইড উৎপাদনের প্রধান কারণ। কাঠের ধোঁয়া থেকেও উল্লেখযোগ্য অ্যাসিড সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খনিজ উত্তোলন ও ধাতুগলন কালেও ভারী ধাতুসমূহের ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় সালফার ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মাটিতে গাছের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে যায়, গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, হ্রদ ও জলাশয়কে মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য করে তোলে। শহরাঞ্চলে অ্যাসিড বৃষ্টি দালানকোঠা ও ভাষ্কর্যের স্বাভাবিক ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের সাথে মিলে অ্যাসিড-বাষ্প নগরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে লেক এবং অন্যান্য জলধারায় অ্যাসিড মিশে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন করে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বাড়ির ইমারতি দ্রব্য ও রঙের ক্ষতি হয় এবং জাতীয় সৌধ বা মর্মর মূর্তিগুলিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। অ্যাসিড বৃষ্টি কমানোর নানা রকম উপায় রয়েছে। একইসাথে ব্যক্তির, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে অ্যাসিড বৃষ্টি কমানো সম্ভব।
সূত্র: বিজ্ঞান বিশ্বকোষ, ইন্টারনেট