মহীয়সী নারী মাদার তেরেসা আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে সারাবিশ্বের মানুষের হৃদয়ে আজো অমর হয়ে আছেন। আলবেনিয়ান বংশোদ্ভুত মাদার তেরেসা রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত বিশ্বখ্যাত সমাজসেবিকা। তাঁর জন্ম ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট আজকের মেসিডোনিয়ার স্কোপিয়ে, মৃত্যু ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার মাদার হাউসে। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন।
আমার শরীরজুড়ে প্রবাহিত আলবেনিয়ান রক্ত, নাগরিকত্বে একজন ভারতীয় আর ধর্মীয় পরিচয়ে আমি একজন ক্যাথলিক নান। তবে নিজের অন্তর্নিহিত অনুভূতি দিয়ে আমি অবগাহন করি বিশ্বময় এবং মনে-প্রাণে আমার অবস্থান যিশুর হূদয়ে।
–মাদার তেরেসা
মাদার টেরিজা বা মাদার তেরেসা (আলবেনীয়: Nënë Tereza, ন্যন্য টেরেযা) আজকের মেসিডোনিয়ার স্কোপি শহরে ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট একটি ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম গোস্কসা। গোস্কসা মূলত একটি তুর্কি শব্দ, যার অর্থ ‘কুসুমকলি’। ব্যাপ্টিশ্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয় অ্যাগনেস গঞ্জে বয়াজিউ। তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ার শ্কড্যর্ অঞ্চলে। বয়স যখন সাড়ে পাঁচ বছর, তখন ধর্মীয় দীক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। শৈশব থেকেই ধর্মীয় নিয়মকানুন আর রীতিনীতিগুলো আত্মস্থ করেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। মাত্র আট বছর বয়সে পিতৃহারা হন মাদার তেরেসা। সে সময় পরিবারটিকে মুখোমুখি হতে হয় আর্থিক দুর্দশার। এমন পরিস্থিতিতেও মা দ্রেনি সন্তানদের বড় করেন সুন্দরতম নিয়ম, নিষ্ঠা আর ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তাঁর কোনোদিন দেখা হয়নি।
অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি মিশনারিদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে শুরু হলো তাঁর শিক্ষিকা জীবন। পাশাপাশি তিনি একটি হাসপাতালেও কাজ করতেন। এখানেই সর্বপ্রথম দুঃখ ও দারিদ্র্যের সঙ্গে তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়। পঞ্চাশের মন্বন্তরে কলকাতা শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু; ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা ও কলকাতার দরিদ্র মানুষদের জীবনযাপন টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৪৮ সালে প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করে তিনি দরিদ্রের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। প্রথম দিকের এই দিনগুলো তাঁর জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। এ নিয়ে ডায়রিতে তিনি অনেক কিছুই লিখেছেন। সে সময় তাঁর হাতে কোন অর্থ ছিল না। গরীব এবং অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হতো। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশা, সন্দেহ ও একাকিত্ব বোধ করেছেন।
১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নির্মল হৃদয়’। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরণের স্বর্গ। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। মুসলিমদেরকে কুরআন পড়তে দেয়া হয়, হিন্দুদের গঙ্গার জলের সুবিধা দেয়া হয় আর ক্যাথলিকদের প্রদান করা হয় লাস্ট রাইটের সুবিধা। এ বিষয় তেরেসা বলেন, “A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted.” এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্ঠরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় ‘শান্তি নগর’। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়।
কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪০০০-এর বেশি নান কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইডস আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার তেরেসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকেপড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশেই মিশনারি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮০-র দশকে ইউরোপের সে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে ওঠে। এ সময়েই মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, “মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।” এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তাঁর মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়।” এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তাঁর সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তাঁর সমালোচনা করেন। কিন্তু তেরেসা সব সময় বলতেন, “No matter who says what, you should accept it with a smile and do your own work.”
মাদার তেরেসা প্রথম পুরস্কার পান ১৯৬২ সালে। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। পরে দুস্থ মানবতার সেবায় আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ মাদার তেরেসা ১৯৭৯ সালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে পোপ জন শান্তি পুরস্কার, ১৯৭২ সালে জওহরলাল নেহরু এবং ভারতরত্ন পুরস্কারসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৮৪টি পুরস্কার ও সাম্মানিক উপাধিতে ভূষিত হন।
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তাঁর দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তাঁর বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয় রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। অসুস্থতা নিয়েও তিনি কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াতেন। তাঁর হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারিও করা হয়েছিল কিন্তু তাঁর ছুটে চলা থেমে থাকেনি। ধীরে ধীরে এভাবেই ঘনিয়ে আসে তাঁর অন্তিম মুহূর্ত। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার মাদার হাউসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহাত্মা নারী।
মাদার তেরেসা ব্যক্তিজীবনে ফাদার সেলেস্তে ভ্যান এক্সেমকে নিজের আধ্যাত্মিক গুরু মানতেন। জীবনের নানামুখী লড়াইয়ে মাদার তেরেসা সঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন পরামর্শ নিতেন তাঁর কাছ থেকেই। একে অন্যের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় তাঁরা ভাগাভাগি করতেন চিঠির মাধ্যমে। ফাদার সেলেস্তে আর মাদার তেরেসা নিজেদের মধ্যে চিঠি লিখেছেন প্রায় চার দশক। তাদের সম্পর্কের এই জায়গাটি নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘দ্য লেটারস’। এর আগে ২০০৩ সালে ‘মাদার তেরেসা অব কলকাতা’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন ইতালিয়ান নির্মাতা ফ্যাবরিজিও কস্তা। একজন সাধারণ যাজিকা থেকে যে কিনা বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। এ ছবিতে মাদার তেরেসার দৃঢ় বিশ্বাসের জায়গাগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে লড়াই, ভারতের কলকাতার বস্তিতে বসবাসরত কুষ্ঠরোগী এবং পরিত্যক্ত শিশুদের সাহায্যের ব্রত নিয়ে কাজ করার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ নির্মাতা কেভিন কনরকেও প্রভাবিত করেছিল মাদার তেরেসার জীবনযাপন। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ নির্মাতা কেভিন কনরক তৈরি করেন ‘মাদার তেরেসা: ইন দ্য নেম অব গড’স পুওর’ নামে বায়োড্রামা। ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের সে ছবিতে দেখা যায় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপে মাদার তেরেসাকে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। কিংবা বিভিন্ন মহলের বিদ্বেষের সম্মুখীন হওয়াসহ তার নিজস্ব ধর্মীয় যুদ্ধের বিবরণ ছবিটি। জেন হার্টম্যান ও ডমিনিক লাপিয়ার গল্প অবলম্বনে এতে অভিনয় করেছেন জেরালডিন চ্যাপলিন, কেনি কার্টিস, হেলেনা ক্যারোলসহ অনেকে। মাদার তেরেসার কলকাতা জীবনকে ঘিরেই ছবি নির্মাণের আগ্রহটা দেখা যায় সবসময়। ১৯৮৬ সালের দিকে তার কর্মজীবন ক্যামেরাবন্দি করার উদ্যোগ নেন অ্যান পিট্রি ও জিনেট পিট্রি। ২ ঘণ্টার সে তথ্যচিত্রে নিয়ে আসা হয়েছে অন্য যাজিকাদের সঙ্গে মাদারের রোজকার জীবন; অসহায় মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আর যোগাযোগের সমন্বয়। এ তথ্যচিত্রে মাদার তেরেসার মিশনারি জীবন থেকে শুরু করে নানা সময়ে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিস্তারিত দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে মাদার তেরেসার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করেছেন অ্যান ও জিনেট। চারটি মহাদেশের ১০টি দেশে মাদার তেরেসার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।
মাদার তেরেসাকে অমর করে রাখার সবচেয়ে বড় প্রয়াসটি ছিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার। বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে যারা দু’মুঠো অন্ন পৌঁছে দেন তাদের তরফে এ স্বীকৃতি হলো সেরেস মেডেল। এ মেডেলের এক পিঠে রয়েছে ভিক্ষাপাত্র হাতে অপুষ্টিতে ভোগা একটি শিশুর মূর্তি আর অন্য পিঠে রয়েছে মাদার তেরেসার ছবি। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের সে সময়কার সেক্রেটারি জেনারেল পেরেজ দ্যা কুয়েলার মাদার তেরেসা সম্পর্কে এক সভায় বলেছিলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানবী হচ্ছেন মাদার তেরেসা। ঈশ্বরের প্রতি অসীম ভক্তির পাশাপাশি মাদার তেরেসার হৃদয়ে ছিল অসহায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ। দিয়ে যাও যতক্ষণ যন্ত্রণা তোমায় বিদ্ধ না করে। জানবে, সত্যিকারের ভালোবাসা যন্ত্রণারই অপর নাম। হৃদয়ের বেদনাই সত্যিকারের ভালোবাসার উৎস। –মাদার তেরেসা
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা
Thank You So Much.