ফিরে দেখা ২০২০

উৎকণ্ঠা, ভীতি, ঘরবন্দি জীবন, অনিশ্চয়তা, আতংক এসব নিয়েই কেটেছে ২০২০। নানা অঘটনের বছর হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিদায়ী ২০২০ সাল। এসব অঘটনের মধ্যে করোনাভাইরাসের মহামারি অন্যতম। এ ছাড়া ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যা, ইরানে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল, বৈরুত বিস্ফোরণ, ব্রেক্সিট চুক্তি, মুসলিম দেশের ইসরাইলের সাথে মৈত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ নানা ঘটনার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০২০ সাল। বাংলাদেশের জাতীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি একদিকে যেমন ছিল অর্জন, তেমনি ছিল নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে হাহাকার এবং অনেকের জন্য স্বজন হারানোর বেদনা।

করোনাভাইরাসের মহামারি

COVID-19চীনের উহান থেকে চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাসের মহামারি। এরপর দেশে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই মহামারিকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়। করোনা মহামারি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রথী-মহারথী কেউ রেহাই পাননি সংক্রমণের হাত থেকে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে আট কোটির বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুও বাড়ছে প্রতিদিন। তবে করোনার টিকা অন্ধকারের শেষে আশার আলো হয়ে এসেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। টিকার সুফল পেতে বিশ্ববাসীকে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল হত্যা


ইরানের সশস্ত্র বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রভাবশালী ইউনিট কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। গত ২ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরাসরি নির্দেশে ঘটনাটি ঘটানো হয়। এর প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাপক। ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির করা পারমাণবিক চুক্তি হুমকিতে পড়ে। প্রতিশোধ নিতে গত ৮ জানুয়ারি ইরাকে দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ওই হামলায় কেউ নিহত না হলেও শতাধিক সেনা নানাভাবে আহত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ঠিক ওই দিনই ইরানের রাজধানী তেহরানে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। এতে নিহত হয় উড়োজাহাজটির ১৭৬ জন আরোহীর সবাই। ইরান স্বীকার করে যে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হয়েছে। তবে দেশটির দাবি, ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত হামলা ছিল না।

রাজকীয় দায়দায়িত্ব থেকে হ্যারি-মেগানের প্রস্থান


ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল গত ৮ জানুয়ারি আকস্মিক এক ঘোষণা দেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান, ‘আমরা রাজপরিবারের “জ্যেষ্ঠ” সদস্যের পদ থেকে সরে যাওয়ার এবং আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করছি। তবে রানির প্রতি আমাদের সমর্থন অটুট থাকবে।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা এখন যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় আমাদের অবস্থানের মধ্যে ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা করছি।’ হ্যারি-মেগানের এমন ঘোষণা সম্ভবত রাজপরিবারের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল।

ব্রেক্সিট কার্যকর


২০১৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণ ব্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এর পরপরই ক্ষমতা থেকে সরে যান দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা থেরেসা মে। কিন্তু থেরেসা মে নানা জটিলতার কারণে ব্রেক্সিট কার্যকরে ব্যর্থ হন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে তিনিও সরে যেতে বাধ্য হন। এরপর দৃশ্যপটে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্যকর হয় ব্রেক্সিট। যদিও বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে মতবিরোধ রয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর গত ২৪ ডিসেম্বর দুই পক্ষ চুক্তির ব্যাপারে একমত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার দাবানল


অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের সূত্রপাত ২০১৯ সালের শেষ দিকে হলেও ২০২০ সালে এসেও সেই দাবানলে পুড়তে থাকে একরের পর একর এলাকা। এই আগুনে ১ কোটি ৮৬ লাখ হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ভবন। দাবানলের কারণে প্রাণ গেছে অগ্নিনির্বাপণকর্মীসহ অন্তত ৩৪ জনের। এ ছাড়া পুড়ে অঙ্গার হয়েছে কোটি কোটি প্রাণী। এই দাবানলের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের জলবায়ু নীতিকে দায়ী করেছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দাবানল ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক চেষ্টার পর গত মার্চের প্রথম দিকে নিউ সাউথ ওয়েলসের আগুন সম্পূর্ণরূপে নেভানো সম্ভব হয়। ওই সময় ভিক্টোরিয়া রাজ্যের আগুনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে পানিবাহী একটি উড়োজাহাজ এবং দুটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ


যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশসহ কর্তৃপক্ষের বর্ণবাদী আচরণের কারণে কয়েক বছর ধরেই ক্ষোভ জমছিল। তা যেন বিস্ফোরিত হয় মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায়। গত মে মাসে ঘটনাটি ঘটে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ নাম পায়। অবশ্য কয়েক বছর আগে থেকেই এই নামে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চলে আসছিল। গত মে থেকে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি জানানো হয়। আন্দোলন চলা অবস্থায় এবং এর আগে-পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। ফলে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। ওয়াশিংটনসহ নানা জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে। ক্রমেই বর্ণবাদবিরোধী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ নানা দেশে। তবে করোনার মহামারির কারণে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনটি স্তিমিত হয়ে আসে।

বৈরুত বিস্ফোরণ


২০২০ সালের ৪ আগস্ট স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হঠাৎ বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে। মুহূর্তে রাজধানী শহরটির বড় একটি অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ঘটনার সূত্রপাত ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী বৈরুতের বন্দরে। সেখানে গুদামঘরে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ছিল ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। ওই জায়গায়ই অগ্নিকাণ্ড থেকে জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। এই দুর্ঘটনায় বৈরুতে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। আহত হয় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ। ওই বিস্ফোরণের শক্তি ছিল এক হাজার থেকে দেড় হাজার টন টিএনটি একযোগে বিস্ফোরণের সমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার ১০ ভাগের ১ ভাগ শক্তি ছিল বৈরুতের ওই বিস্ফোরণের। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক কৃত্রিম বিস্ফোরণগুলোর অন্যতম বৈরুতের বিস্ফোরণ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন


গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তাঁর রানিং মেট কমলা হ্যারিস। তবে নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। ভোটের ফল পাল্টে দিতে একের পর এক মামলা ঠুকেছেন ট্রাম্প। তবে সব কটি মামলাতেই পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন এক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছেন, যা এর আগে দেখা যায়নি।

ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী হত্যা


ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন গত ২৭ নভেম্বর। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি ফাদাভি দাবি করেছেন, একটি ট্রাকের ওপর স্থাপিত রাইফেল দিয়ে বিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহর মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ সময় গাড়িতে তাঁর পাশে থাকা তাঁর স্ত্রী অক্ষত ছিলেন। ঘটনার সময় ফাখরিজাদেহ রাজধানী তেহরানের কাছে আবসার্দ শহরে ছিলেন। চলতি পথে তাঁর ওপর হামলা হয়।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ


মরক্কো ১০ ডিসেম্বর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ নিয়ে ২০২০ সালের শেষ চার মাসে চারটি আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিল। বাকি তিন দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ডিসেম্বর মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন। এরপরই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণাটি আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওয়েস্টার্ন সাহারা অঞ্চলে মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেবেন ট্রাম্প। বিনিময়ে মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে এবং দুই দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ দেবে।


২০২০ সালে বাংলাদেশের জাতীয় অঙ্গনের আলোচিত ঘটনা

১। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী


২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত এক বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করার ঘোষণা করে সরকার। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে বছরব্যাপী এ আয়োজনের। সীমিত আয়োজনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া লাল ও সবুজ রঙের আলোকসজ্জা, আতশবাজি আর আলোচনার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ উদ্বোধন করা হয়। মুজিববর্ষ পালনে এক বছরব্যাপী নানা ধরণের কর্মসূচি নেয়া হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাটছাঁট করা হয় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সূচিতে।

২। অবকাঠামোগত অর্জন – পদ্মা সেতু


নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পূর্ণ অবয়ব পেয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুর মূল কাঠামো। যুক্ত হয়েছে পদ্মার দুই তীর। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতুই রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করবে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির উপরে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যান। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ৩ বছর দুই মাস দশ দিনে শেষ হয়েছে সেতুর ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ। ১১ ডিসেম্বর বেলা ১২টা ২ মিনিটে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হয়। এর মধ্য দিয়েই সেতুর মূল কাঠামোর পুরোটা দৃশ্যমান হয়েছে। দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

৩। মেট্রোরেল


মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত উড়ালপথে রেললাইন বসানো শুরু হচ্ছে। আগামী জুনে ইঞ্জিন-কোচ চলে আসার কথা। সেগুলো ঠিকঠাকমতো বসানোর পর শুরু হবে পরীক্ষামূলক চলাচল। সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে ২০২১ সালের শেষে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজধানীবাসী বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

৪। সিনহা হত্যাকাণ্ড


৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশেই খুন হয়েছেন সিনহা মো. রাশেদ খান। এরপর ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে। ৫ আগস্ট নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ মামলার সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একইদিন নয় আসামির মধ্যে সাত আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

৫। পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যা


১০ অক্টোবর রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে আনা হয়। পরে সকাল ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ফাঁড়ি থেকে বের করা হয়। ৬টা ৪০ মিনিটে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। রায়হানের মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। রায়হান হত্যাকাণ্ডে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ৯ নভেম্বর দুপুরে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ নভেম্বর সকালে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে খাসিয়াদের সহযোগিতায় পুলিশ আকবরকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ রাত ৭টার দিকে আকবরকে পিবিআই কাছে হস্তান্তর করে।

৬। পরীক্ষা বাতিল, অটোপাস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি


বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর সেই ছুটি ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে টিভিতে শ্রেণি পাঠদান সম্প্রচার করা হচ্ছে। আর উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষাস্তরে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনার কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে বাতিল করে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

৭। ঘুর্ণিঝড় আম্ফান


গত ২০ মে বিকাল ৫টার দিকে উপকূলের বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান৷ ওই সময় এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝেড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল৷ এটি ভারতের সাগারদ্বীপের পাশ দিয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভূভাগে উঠে আসে৷ ঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশে মারা গেছেন ১৬জন। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে প্রাথমিকভাবে প্রায় সাড়ে এগারোশ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টসহ অবকাঠামোর পাশাপাশি ঘরবাড়ি, কৃষি এবং চিংড়ি ঘেরসহ মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দেশের ২৫টি জেলায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঘূর্ণিঘড় আঘাত হানার আগের দিন থেকেই বিদ্যুতহীন অবস্থায় ছিলেন। দক্ষিণ পশ্চিমের জেলায় পানের বরজ থেকে শুরু করে রাজশাহীতে মৌসুমি ফল আম এবং উত্তরের অন্য জেলাগুলোয় ধান এবং সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয় এই ঝড়ের তাণ্ডবে।

৮। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান


গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের ফলে এই দিন সংশোধিত আইনটি এখ্ন থেকেই কার্যকর হিসেবে জারি হয়। এর আগে, ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অধ্যাদেশটিকে অনুমোদন দেয়া হয়।

৯। খালেদা জিয়ার কারামুক্তি


২৫ মাস পর বয়স ও মানবিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তির আদেশের নথি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের হাত ঘুরে এইদিন বিকালে ৩টার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পৌঁছায়। এরপর বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বের হন খালেদা জিয়া।

১০। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর


গত ৪ ডিসেম্বর রাত দুইটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এসময় ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিনই ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন মামলা করেন। এ ঘটনায় গ্রেফতার দুই ছাত্রের পাঁচ দিন ও দুই শিক্ষকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

১১। টাইগার যুবাদের বিশ্বজয়


২০২০ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক চারটি শিরোপা জয়ী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত এই আসরে বিশ্বকাপজয়ীদের তালিকায় নাম লেখিয়েছে টাইগার তরুণরা।


২০২০: মহামারীর বছরে যাদের হারিয়েছে বাংলাদেশ

  1. সাবেক এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি
  2. বগুড়ার এমপি মান্নান
  3. সাংসদ ইসমাত আরা সাদেক
  4. আ. লীগের সাবেক এমপি রহমত আলী
  5. সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
  6. পাবনার এমপি শামসুর রহমান শরীফ
  7. নারীনেত্রী রাখী দাশ পুরকায়স্থ
  8. স্থপতি বশিরুল হক
  9. ভাষাসৈনিক সুফিয়া আহমেদ
  10. সাবেক সচিব সা’দত হুসাইন
  11. বিটিভির প্রথম নারী ক্যামেরাপারসন রোজিনা
  12. অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী
  13. সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা
  14. অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
  15. সুরকার-শিল্পী আজাদ রহমান
  16. নৃত্যশিল্পী হাসান ইমাম
  17. একুশে পদকপ্রাপ্ত মজিবর রহমান দেবদাস
  18. ঢাকার সাবেক এমপি মকবুল
  19. সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিলুফার মঞ্জুর
  20. ব্যবসায়ী আবদুল মোনেম
  21. চিকিৎসক এন আই খান
  22. সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম
  23. ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ
  24. সাবেক সংসদ ও বৈমানিক সাইফুল আজম
  25. সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান
  26. সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক কামাল লোহানী
  27. জনপ্রিয় সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক
  28. ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান
  29. কন্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর
  30. দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন
  31. যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল
  32. ছাত্রলীগ, জাসদ ও পরে বিএনপির নেতা শাহজাহান সিরাজ
  33. অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ
  34. এমপি ইসরাফিল আলম
  35. সংগীত কিংবদন্তী আলাউদ্দিন আলী
  36. মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত
  37. সাহিত্যিক-সাংবাদিক রাহাত খান
  38. সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী
  39. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী
  40. অভিনেতা কে এস ফিরোজ
  41. অভিনেতা সাদেক বাচ্চু
  42. হেফাজত আমির আহমদ শফী
  43. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় নওশেরুজ্জামান
  44. অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
  45. কথাশিল্পী রশীদ হায়দার
  46. চিত্রশিল্পী মনসুর উল করিম
  47. ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
  48. কমিউনিস্ট নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আনোয়ার খান জুনো
  49. কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত
  50. সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী
  51. সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়
  52. সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনীরুজ্জামান
  53. অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকের
  54. বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ
  55. হেফাজত মহাসচিব কাসেমী
  56. চিত্রশিল্পী আবু তাহের
  57. কবি মনজুরে মওলা
  58. নাট্যজন মান্নান হীরা
  59. ব্যবসায়ী এম এ হাসেম
  60. সাবেক সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর
  61. অভিনেতা আবদুল কাদের

———————————————–
ছবি ও তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ও বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা (প্রথম আলো, বিডি নিউজ ২৪)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।